ধ্বংসের দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসি দেওয়া অদ্ভুত এক মানুষ দেখেছি আমি। হয়তো অনেকের কাছেেএকটু অন্যরকম কিংবা আলাদা প্রকৃতির মানুষ সে। হয়তো অনুভূতির ভেতরে কোন এক গভীর অতল দুঃখ বাসা বেঁধেছে… তবুও নিজেকে জোর করে হাসাতে শিখে গেছে। যেদিন ভেতরটা একেবারে ভেঙে গিয়েছিল সেদিনও বাইরে থেকে এক চিলতে হাসি মুখে সবার সামনে দাঁড়িয়ে ছিলো। কষ্টগুলোকে বন্ধু বানিয়েছে, একাকীত্বকে আপন করে নিয়ে। হা, আমি এমন একজন মানুষের কথা বলছি যিনি শত কষ্টের মাঝেও হাসতে জানেন। তিনি আর কেউ নন, মতলবের গর্বিত সন্তান বাংলাদেশ কৃষকলীগের কেন্দ্রিয় কমিটির ত্রাণ ও সমাজকল্যান বিষয়ক সম্পাদক আমিরুল ইসলাম খোকা পাটোয়ারি। তাকে দেখে মানুষ ভাবে তিনি হয়তো খুব শক্ত, নির্লিপ্ত মনের একজন মানুষ কিন্তু তারা জানে না, এই মানুষটি প্রতিটি দিন কিভাবে দেশের ভালবাসার জন্য একা লেখনীতে লড়াই করে গেছেন। হতাশার আধারে ডুবে ভেঙে যাচ্ছিলেন প্রতিদিন একটু একটু করে, আর এই ধ্বংস হওয়াটাকেই যেন একসময় ভালবেসে ফেলেছেন মনের মাধূরি মিশিয়ে। আমি কাছ থেকে দেখেছি তার কলমের ক্ষমতা, তিনি কখনও রাজনীতিক প্রভাব কিংবা ক্ষমার অপব্যবহার করেননি। তিনি মানুষের জন্য কাজ করে গেছেন নিরবে-নির্ভৃতে।
আমিরুল ইসলাম খোকা পাটোয়ারি সেই মানুষ, যে হার মানতে শিখেনি, যিনি কান্নার ভয়ে চুপ মেরে যাননি। তিনি জানতেন, পৃথিবী শুধু শক্তদের মনে রাখে, দুর্বলদের নয়। তাই তো তিনি এক শক্তিমান মানুষ হতে পেরেছেন, হয়েছেন অনুভূতির আগুনে পুড়ে যাওয়া নিরব কলমযোদ্ধা। এটা কোন জীবনের সুখের গল্প এটা নয়, এটা ছিল কোন কলমাযোদ্ধার দেশের জন্য নিরব-নিঃশব্দ বিপ্লব। যেখানে হাসির আড়ালে লুকানো থাকে হাজারো না বলা কথা, ভাঙ্গা স্বপ্ন হারিয়ে যাওয়া। এই দেশের ক্ষমতার মসনদে যারাই যখন বসেছে! তারাই কলম ভেঙে দিতে চেয়েছেন, লেখকের লেখনী বন্ধ করে দিয়েছেন মুখ চেপে ধরে।
একজন প্রথাবিরোধী লেখক হুমায়ুন আজাদকে ‘নাস্তিক’ আখ্যা দিয়ে আক্রমণ করে মেরে ফেলা হলো। অথচ আজ কিনা তার লেখার কাছে, তার মূল্যায়নের কাছে অনিবার্যভাবে যেতে হচ্ছে। যে আহমদ ছফাকে ‘বিচ্ছিন্নতাবাদী’ ‘দেশবিরোধী’ বলে আখ্যা দেওয়া হয়েছিল সেদিন, আজ তার লেখার কাছে, তার চিন্তার কাছে নতিস্বীকার করতে হচ্ছে পুরো জাতিকে। আমিরুল ইসলাম খোকা পাটোয়ারি হয়ত লেখনীতে তাদের সমান নয়, তবে তার চিন্তা-চেতনা সব ছিল দেশ-দেশের মানুষ আর এই সভ্যতাকে ঘিরে। তিনি সর্বসময় চিন্তা করতেন কি করে এদেশের মানুষের উপকার হয়, এমন সব কাজ করা যায়। তিনি শুধু রাজনীতি করে মানুষের উপকারের কথা চিন্তা করতেন না, বরং একজন রাজনীতিক সমালোচক হয়ে দেশের মানুষের পক্ষে কথা বলে গেছেন দল-মত-পথ ভুলে। তিনি কোনটা নিজের দল আর কোনটা অন্য দল সে ভাবনা কখনও ভাবেননি, বরং ভেবেছেন কি করলে সাধারণ মানুষের উপকার হবে। বর্তমানে দেশের এহেন পরিস্থিতিতেও তিনি দেশে প্রাকৃতিক দূর্যোগে ছুটে গেছেন মানুষের পাশে মানবিক মানুষ হয়ে। তিনি একবারও নিজের কিংবা পরিবারের কথা ভাবেননি। একজন দেশ পাগল মানুষ তিনি তার প্রমাণ মেলে, এহেত অবস্থায় শতবার বিদেশে যাওয়ার সুযোগ থাকার পরও তিনি পরে ছিলেন দেশের জন্য-মানুষের জন্য। চাইলে অন্যসব জাতীয় নেতৃবৃন্দের মতো কোন দেশে পাড়ি জমাতে পারতেন কিন্তু সেটা তিনি করেননি। তিনি চাইলে আত্মগোপন করে থাকতে পারতেন কোন অজুহাত ছাড়া। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের নাম বিক্রয় করে নেতা হওয়া বহু প্রতারক গত বছরের পর থেকে রাজনীতিতে নিষ্কিয় হয়ে গেছেন, কিংবা কেউ আবার রাজনীতি করবেন না এমন ঘোষণাও দিয়ে নিউজ প্রকাশিত হয়েছে। আবার এও দেখা গেছে কোন কোন সুবিধাভোগী অন্য দলে যোগদান করে নিজের আখের গুছিয়ে নিয়েছেন নতুন সাজে। তিনি চাইলে এটাও করতে পারতেন, কিন্তু না! আমিরুল ইসলাম খোকা পাটোয়ারি নিজের আদর্শ আর নীতিতে অটুট থেকে নিজ দলের জন্য সামাজিক মাধ্যম সহ সর্বত্র প্রতিবাদ করে গেছেন সরবে। একবারের জন্যেও পিছপা হয়নি। অন্যরা যখন পরিবার পরিজন নিয়ে বিদেশের মাটিতে বসে মজা-মাস্তিতে ব্যস্ত তখন এই নীতিবান মানুষটি নিজ অবস্থান থেকে দলীয় কর্মীদের প্রতিবাদী উৎসাহ দিয়ে মন-মানসিকতা চাঙ্গা করে রেখেছেন। তিনি চাইলে তো এটা না করে চুপ করে বসে থাকতে পারতেন। যেমনটা অন্যরা করতেছে কিংবা করেছে। তাঁর এই সব কাজের জন্য তিনি অন্যদের কাছে যেমন সমালোচিত তেমনি নিজ দলের হাইব্রিড আর স্বার্থবাজ নেতাদের কাছেও সমালোচনার পাত্র হয়েছেন। তিনি কখনও নিজের আদর্শের বাহিরে গিয়ে কাউকে তেল মেরে কাজ করা পছন্দ করতেন না কিংবা করেন না। আমি তাকে যতটা দেখেছি ও জেনেছি আমিরুল ইসলাম খোকা পাটোয়ারি একজন স্পষ্টবাদী রাজনীতিবিদ ও রাজনীতি সমালোচক লেখক। অন্তবর্তিকালীন সরকার প্রথম থেকে যেভাবে বাক স্বাধীনতার কথা বলে মানুষকে গল্প শুনিয়েছে আমি ভেবেছি একজন রাজনীতিবিদ নয়, বরং একজন রাজনীতি সমালোচক লেখক হিসাবে খোকা পাটোয়ারি তার যথাযথ মূল্যায়নটুকু পাবে, কিন্তু সেটা দেখি গুড়েবালি। তাঁর মতো একজন কলমযোদ্ধাকেও তারা নিস্তার দেয়নি। তাকেও আইনের কাঠঘড়ায় দাড় করিয়ে ছেড়েছে। যা জাতি হিসাবে আমাদের জন্য বেদনা আর লজ্জার। তারা প্রমাণ করেছে বাক স্বাধীনতা বলে যে বুলি তারা আওরাতো তা ছিল শুধু কথার কথা আর ঠাকুর মার ঝুলির গল্প মাত্র। আসলে সমালোচনা নেয়ার মতো সাহস ও যোগ্যতা কোনটাই তাদের নেই। তারা অনেকটা পাড়ার নিচু মানসিকতা ও মনের মাসির মতো, যে কিনা পান থেকে চুন খসলে পুরো পাড়া মাথায় তুলে ফেলে। বর্তমান পরিষদে যারা আছে তারা নিজেদের সর্বোচ্চ উচ্চ শিক্ষিত আর সভ্য দাবি করলেও সেটা প্রমাণ করতে বার বার ব্যর্থ হয়েছেন। এর প্রমাণ হচ্ছে দেশের কলমযোদ্ধাদেরে মুখ চেপে ধরে শ্বাসরোধ করিয়ে দেয়ার চিত্র। এরা প্রতিনিয়ত নানা অজুহাতে দেশের বিভিন্ন স্বনামধন্য কলমযোদ্ধাদের মব আর নাটকীয় বাহানায় আটক করছে আর জেলে পুরে দিচ্ছে। এত স্পষ্ট প্রমাণ পাওয়া যায়, তারা এবং তিনি নিজেদের যতই শিক্ষিত আর সভ্য হিসাবে ঢোল পিটাক না কেন, আদতে তিনি এবং তারা অতটা শিক্ষিত আর সভ্য নয়।
মহান মুক্তিযুদ্ধে আওয়ামী লীগের অবদানকে বিভিন্নভাবে ভুলিয়ে দিতে কিংবা মুছে দিতে তারা যেন আজ উঠেপড়ে লেগেছে। যা এ যাবৎকালে একটু খাটো হননি কিংবা ম্লান হয়ে যাননি। বরং হয়েছেন আরো প্রাসঙ্গিক। ঠিক যেমন পঁচাত্তর পরবর্তী এই অর্ধশত বছরে বিভিন্ন শক্তি বঙ্গবন্ধুকে যতভাবে ভুলিয়ে দিতে কিংবা মুছে দিতে চেষ্টা চালিয়েছে তত বেশি তিনি অম্লান তত বেশি প্রাসঙ্গিক হয়ে ওঠেছেন। আমরা দেখতেছি যে দেশে সাম্প্রতিককালে পাঁচ আগস্ট পরবর্তী একাত্তরকে মুছে দিতে উদ্যত হয়েছে যে কালো হাত—তা প্রতিহত করতে দায়িত্বশীল ভূমিকা রেখে চলছে স্বাধীনতার উত্তরাধিকারী কলমযোদ্ধারা। কেননা তারাও যে একাত্তরের বীর সেনানী হিসাবে নিজেদের দায়িত্বজ্ঞান মনে করে। এই কলমযোদ্ধারা ভাল করে ই জানে একাত্তর মুছে দিলে মুছে যায় বাংলাদেশও। কারণ, একাত্তর ই যে বাংলাদেশের ফাউন্ডেশন।
আমিরুল ইসলাম খোকা পাটোয়ারি সবসময় বিশ্বাস করেন, একটা রাষ্ট্রের জাতীয় ইতিহাস ও ইতিহাসের মহানায়করা দল-মতের ঊর্ধ্বে, তারা কারো ব্যক্তিগত সম্পত্তি নন, তারা সবার। আর ইতিহাসের মহানায়কদের কখনো মৃত্যু হয় না, চাইলেও মুছে ফেলা যায় না। সেই বিশ্বাস থেকে তিনি সবসময় তিনি রাজনীতি চর্চা করে যাচ্ছেন। তিনি বলেন, পাঞ্জাবির বুকে কালো ব্যাজ লাগালে কিংবা গরু জবাই দিয়ে পথে পথে কীর্তন বাজানো হলে বা তার মূর্তির কাছে ফুলে ফুলে ভরিয়ে দিলেই তাকে ভালোবাসা যায় না, আদর্শের নেতাকে ‘ধারণ’ করতে হয়। কিন্তু তা ওভাবে কেউ করেনি, করেছে তাকে ঘিরে হরেক রকমের ধান্দা ও ব্যবসা।
খোকা পাটোয়ারি দৃঢ়চিত্তে বিশ্বাস করেন, ইতিহাসকে কখনও মাটিচাপা দেওয়া যায় না, রাষ্ট্রযন্ত্রের কামান কিংবা বুলেটের শক্তি দিয়েও ইতিহাসকে দমিয়ে রাখা যায় না। কোনো শাসকই সে জায়গায় সফল হননি। ইতিহাসকে ছেড়ে দিতে হবে তার আসন। কোনটা গ্রহণযোগ্য আর কোনটা গ্রহণযোগ্য নয়, তা তো জনগণই বিচার করবে।
আমাদের দেশে বর্তমানে সব অপরাজনীতির ভয়াল থাবার গ্রাসে আক্রান্ত। এ দেশের বহু অপার সম্ভাবনা কে আজ তারা অঙ্কুরে বিনষ্ট করে দিচ্ছে। এখানকার নির্মম বাস্তবতা হলো, এখানে সবকিছুতে রাজনীতি ঢুকিয়ে দেওয়া হচ্ছে। সবকিছু মূল্যায়ন করা হয় রাজনীতির ভিত্তিতে। তবে, এটা ঠিক যে শেষমেশ ইতিহাসের সত্যের কাছে রাজনীতির নোংরা খেলা কখনো জয়লাভ করতে পারে না, পারেনি কখনো। ইতিহাস বারবার সেটিই আমাদের শিক্ষা দিয়ে যায়। কিন্তু আমরা শিক্ষা নিই না। কারণ, আমরা যে জাতি হিসাবে বড় ই অকৃতজ্ঞ।
আমিরুল ইসলাম খোকা পাটোয়ারি আজ দেশের চলমান মবতন্ত্র আর অপরাজনীতির করালগ্রাসে আক্রান্ত হয়ে বর্বরতার শিকার এই কথা অস্বীকার করার কোন অবকাশ নেই। তাঁর অসামান্য প্রতিবাদী লেখনী তাকে অন্যদের চোখের কাটা বানিয়েছে। জাতীয় রাজনীতিতে তাঁর হয়ত তেমন কোন চোখে পড়ার মতো অবদান নাই কিন্তু তার নিজ সংগঠনের জন্য তাঁর অবদান অস্বীকার করা যায় না। আজ যারা দলকে নিজের পৈত্রিক সম্পত্তি বানিয়ে ফেলা—সর্বোপরি জাতীয় ইতিহাস নিয়ে এমন নোংরামি করছেন তা পৃথিবীর আর কোথাও নেই। দল-মতের ঊর্ধ্বে ওঠে আজও আমরা ‘বাংলাদেশ’ প্রশ্নে এক হতে পারিনি। এজন্য আমাদের ‘কাঙ্ক্ষিত মুক্তির’ দেখাও মিলছে না।
সবশেষে, আমার বিশ্বাস অন্তবর্তিকালীন সরকার আমিরুল ইসলাম খোকা পাটোয়ারির মতো দেশের সভ্য-সুশীল রাজনীতিবিদ ও রাজনীতি সমালোচক লেখকদের সমালোচনা সহ্য করার যোগ্যতা দেখাবে এবং তাকে সহ অন্যদের অপরাজনীতি মামলা ও হয়রানী থেকে মুক্তি দেবেন। সেই দিনের প্রত্যাশায় আজ পুরো জাতি।
লেখক :
আজম পাটোয়ারি
প্রকাশক
আরডিএম মিডিয়া এন্ড প্রকাশক।