November 6, 2025, 10:18 pm
শিরোনামঃ
দল-মত নির্বিশেষে চাঁদপুর-২ আসনে জনপ্রিয়তার শীর্ষে তানভীর হুদা বিনয়বাঁশী শিল্পীগোষ্ঠী কর্তৃক বাংলাদেশের ঐতিহ্যবাহী রাস উৎসব পরিদর্শন  কিউএস এশিয়া ইউনিভার্সিটি র‌্যাংকিং-এ প্রথমবারের মতো বরেন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয় দেশের প্রথম কেবল স্টেইড ব্রিজ হবে মতলব-গজারিয়া সেতু : সেতু সচিব আবদুর রউফ মতলব উত্তরে জাটকা রক্ষা অভিযানে ১২০ কেজি জাটকা উদ্ধার ; এতিমখানায় ও দুস্থদের মাঝে বিতরণ মতলব উত্তরে গাঁজা চাষের সন্ধান ; ৪টি গাছ উদ্ধার ক্যাম্পাসে শৃঙ্খলা ভাঙলে বহিষ্কার: ছেংগারচর সরকারি কলেজের কঠোর নির্দেশনা বিএনপির নেতা সালাউদ্দিন মাহতাবকে জরিয়ে ভুয়া কল রেকর্ড প্রচারণা চাঁদপুর-২ আসনের বিএনপির মনোনয়ন পাওয়ার পর বাবা-মা’সহ প্রয়াত বিএনপির নেতাদের কবর জিয়ারতে ড. জালাল উদ্দীন অনলাইন নারীর দ্বৈত চরিত্র : সুবিধাবাদী ব্যবহার ও সামাজিক দ্বন্দ্ব

সোমবার শুরু তিন দিনব্যাপী রাস উৎসব ; এবছরও হচ্ছেনা মেলা

ম.ম.রবি ডাকুয়া,বাগেরহাটঃ

সুন্দরবন সংলগ্ন বঙ্গোপসাগরের মোহনায় দুবলার চরে তিন দিনব্যাপী ঐতিহ্যবাহী রাস উৎসব শুরু হচ্ছে সোমবার (৩ নভেম্বর)।

ইতোমধ্যেই সাগর তটে রাস উৎসবকে ঘিরে সব ধরনের প্রস্তুতি সম্পন্ন করা হয়েছে। তবে এ বছর শুধু সনাতন ধর্মালম্বীরা অংশ নিতে পারবেন রাস পূজা ও পুণ্যস্নানে। তবে রাস উৎসবকে কেন্দ্র করে থাকছে না কোনো সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান বা মেলার আয়োজন।

রাস উৎসবকে ঘিরে সুন্দরবনে পূণ্যার্থী ছাড়া অন্য কারো প্রবেশের অনুমতি দেয়া বন্ধ করেছে বন বিভাগ। পূণ্যার্থীরা নির্ধারিত পাঁচটি রুট দিয়ে সুন্দরবনে প্রবেশ করতে পারবেন। আর ফিরেও আসতে হবে একই রুট দিয়ে। সব পূণ্যার্থীর অবশ্যই জাতীয় পরিচয়পত্র দেখিয়ে সুন্দরবনে প্রবেশ করতে হবে।

এদিকে, রাস উৎসব ঘিরে বাগেরহাট জেলা প্রশাসন, পুলিশ বিভাগ ও বন বিভাগের পক্ষ থেকে সেখানে কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। বন বিভাগের বেশ কয়েকটি টিম শনিবার (১ নভেম্বর) থেকে সুন্দরবনের বিভিন্ন পয়েন্টে টহল শুরু করেছে।

সুন্দরবন পূর্ব বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) রেজাউল করিম চৌধুরী জানান,  নির্ধারিত রাজস্ব জমা দেয়ার পর বন বিভাগ থেকে পাস (অনুমতি) নিয়ে নির্ধারিত পাঁচটি রুট দিয়ে পূণ্যার্থীরা রাস উৎসবে যেতে পারবেন এবং একই রুট দিয়ে তাদের ফিরতে হবে।

তিনি আরও জানান, বঙ্গোপসাগর তীরবর্তী সুন্দররবনের দুবলার চরের ঐতিহাসিক রাস উৎসব ঘিরে এবার ব্যাপক কড়াকড়ি আরোপ করা হয়েছে। শুধুমাত্র সনাতন ধর্মাবলম্বী পূণ্যার্থী ছাড়া কোনো ট্যুরিস্ট যাওয়ার অনুমতি পাবে না। বনের প্রাকৃতিক পরিবেশ রক্ষা, হরিণ শিকার ও প্লাস্টিক বর্জ্য দূষণ রোধে এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। পূণার্থীদের জন্য নির্ধারণ করা হয়েছে পাঁচটি নৌপথ। উৎসবকে কেন্দ্র করে বনবিভাগ ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নিরাপত্তাও বৃদ্ধি করা হয়েছে।

যেসব রুট দিয়ে পূণ্যার্থীরা রাস উৎসবের জন্য সুন্দরবনে প্রবেশ করতে পারবেন সেগুলো হলো-

ঢাংমারী-চাঁদপাই স্টেশন ত্রিকোনা আইল্যান্ড হয়ে দুবলার চর, বগী-বলেশ্বর-সুপতি স্টেশন-কচিখালী-শেলারচর হয়ে দুবলার চর, বুড়িগোয়ালিন, কোবাদক থেকে বাটুলা নদী-বল নদী-পাটকোষ্টা খাল হয়ে হংসরাজ নদীর পর দুবলার চর।

বনবিভাগ সূত্রে জানা গেছে, আগামী ৩ নভেম্বর থেকে প্রতিবছরের ন্যায় পূর্ব সুন্দরবনের শরণখোলা রেঞ্জের দুবলার চরের আলোরকোলে অনুষ্ঠিত হবে তিন দিনের রাস উৎসব। আলোরকোলে নির্মিত অস্থায়ী মন্দিরে দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে সনাতন ধর্মের মানুষ এসে সেখানে পূজা করবেন। সনাতন ধর্মের বিধান অনুযায়ী পূর্ণিমার ভরা তিথিতে ৫ নভেম্বর ভোরের সাগরের প্রথম জোয়ারের লোনা জলে পূণ্যস্নানের মধ্য দিয়ে সাঙ্গ হবে সনাতনীদের এ মিলন মেলা।

ঐতিহাসিকভাবে জানা যায়, ১৮শ’ শতকের শেষভাগে বা ১৯ শতকের শুরুর দিকে সুন্দরবনের দুবলার চরে রাস পূজা শুরু হয়। হরভজন দাস নামে এক হিন্দু সন্ন্যাসী এ রাস পূজার গোড়াপত্তন করেন। তিনি তার ভক্তদের নিয়ে রাস পূর্ণিমার তিথিতে দুবলার চরে পূজাঅর্চনা ও সাগরের লোনা জলে পুণ্যস্নান করতেন। সেই ধর্মীয় অনুষ্ঠান থেকেই ধীরে ধীরে ‘দুবলার চরের রাস মেলা’র প্রচলন ঘটে।

এরপর থেকে দুবলা ফিশারম্যান গ্রুপের আয়োজনে সাগরদীপ আলোরকোলে রাস পূর্ণিমা সনাতনীদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় ও পর্যটন উৎসব হিসেবে পালিত হয়ে আসছে। কিন্তু পরবর্তীতে এই রাস উৎসব কেন্দ্র করে লাখো মানুষের লোকসমাগম ঘটে। সনাতন ধর্মের মানুষের পাশপাশি উৎসবে যোগ দেয় দেশি-বিদেশি পর্যটক। ভক্ত ও পর্যটকদের ভিড়ে চাপ বাড়তে থাকে বন্যপ্রাণীর আবাস্থলের ওপর। মেলাকে কেন্দ্র করে শব্দ দূষণ ও প্লাস্টিক বর্জ্যে ক্ষতির মুখে পড়ে বনের পরিবেশ। এছাড়া বাড়তে থাকে পূণ্যার্থীর ছদ্মবেশে আসা হরিণ শিকারী চক্রের অপতৎপরতা। শেষমেষ জীববৈচিত্র্য রক্ষা ও দূষণের কথা চিন্তা করে ২০১৭ সালে সীমিত করা হয় মেলার কার্যক্রম। এরপর থেকে রাস উৎসব শুধু ধর্মীয় আনুষ্ঠানিকতা ও পুণ্যস্নান উৎসবের মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখা হয়।

রাস উৎসব উদযাপন কমিটির সভাপতি ও দুবলা ফিশারমেন গ্রুপের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. কামাল উদ্দিন আহমেদ জানান, ৩ নভেম্বর থেকে রাস উৎসবের আনুষ্ঠানিকতা শুরু হবে। বনবিভাগের অনুমতি নিয়ে মূল পূজাস্থল আলোরকোলে শুরু হয়েছে রাধা-কৃষ্ণের অস্থায়ী মন্দির নির্মাণের কাজ। এই মন্দিরে দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে হিন্দু ধর্মের ভক্তবৃন্দরা এসে তাদের মনবাসনা পূরণের আশায় পূজাঅর্চনা করবেন। ৫ নভেম্বর প্রত্যুষে সাগরের প্রথম জোয়ারে পূণ্যস্নান শেষে যে যার গন্তব্যে ফিরে যাবেন পূণ্যার্থীরা। উৎসবকে কেন্দ্র করে যাতে কোনো ধরনের অনাক্ষিত ঘটনা না ঘটে সে ব্যাপারে সতর্ক রয়েছে কমিটি।

বন বিভাগের তথ্য মতে, প্রতি পুণ্যর্থীকে তিন দিনের জন্য ৭৫ টাকা, নিবন্ধন যুক্ত প্রতিটি ট্রলার (তিনদিন) জন্য ৩০০ টাকা, নিবন্ধনবিহীন প্রতিটি ট্রলারের (তিন দিন) জন্য ১ হাজার টাকা এবং প্রতিটি ট্রলারের অবস্থান ফি (প্রতিদিন) ৩০০ টাকা রাজস্ব দিতে হবে।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *


ফেসবুকে আমরা